১৯৭৯ সালে ডেনি গ্রোগান রেফারেন্স প্রক্রিয়ার দুটি তাৎপর্য পূর্ণ পর্যায়ের উল্লেখ। প্রথম পর্যায়ের নায়ক পাঠক, দ্বিতীয় পর্যায়ের উপ নায়ক হিসেবে মঞ্চে অবতীর্ণ হন লাইবেরিয়ার স্বয়ং। প্রথম তিনটি পদ ক্ষেপন করেন পাঠক, বাকি পঞ্চ পদ গমন করেন গ্রন্থাগারিক।
১) সমস্যা :–
সমস্যা দিয়ে রেফারেন্স প্রক্রিয়ার সূচনা। যেকোনো পাঠকই সমস্যা নিয়ে আসতে পারেন, কিন্তু সকলেই শুধু সংবাদে খুশি হন না।
২) সংবাদ চাহিদা :–
এই পদক্ষেপে পাঠকের মনে অনুভূত হয় সংবাদ এর প্রয়োজন । কিছু জানা হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা হয় অস্পষ্ট এবং ব্যাপক সীমার মধ্যে প্রসারিত । কিংবা বলা যায়, তখনও সংবাদ সঠিক পথ খুঁজে পায় না।
৩) প্রাথমিক প্রশ্ন :–
পাঠক যখন জিজ্ঞাসা কড়াই ব্যস্ত করেন তখন তাকে মনে মনে প্রশ্নটিকে সানিয়ে তুলতে হয়। আর স্বয়ং তৎপর হলে ঠিক করে নিতে হয় কোন শব্দ অবলম্বন করে তিনি সন্ধানী নায়ক হবেন। লাইব্রেরিয়ানের কাছে যখন প্রশ্নটিই উত্থাপিত হল তখনই শুরু হয়ে গেল এই অষ্টপদী অভিযানের দ্বিতীয় পর্যায়।
৪) রেফারেন্স সাক্ষাৎকার :–
জিজ্ঞাসিত না হলে লাইব্রেরিয়ান রেফারেন্স প্রক্রিয়ার মধ্যে অবতীর্ণ হতে পারেন না। সাফল্য লাভের জন্য কিন্তু লাইব্রেরিয়ান কে প্রথম পদক্ষেপ গুলির সঠিকতা সম্পর্কেও জেনে নিতে হয়। প্রাথমিক প্রশ্নটির সংশোধন ও পরিমার্জননেরও অবকাশ থাকে। অর্থাৎ অভীষ্ট লক্ষ্যের অভিমুখে প্রায়শই প্রশ্নটাকে আরো স্বচ্ছ ও সূচাগ্র করে তুলতে হয় আদ্রে কনরাড এই পরিস্থিতিতে লাইব্রেরিয়ানের ভূমিকাকে ঘটক এর সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি ঘট কালি করেন পাঠক ও কাঙ্খিত সংবাদের মিলন করার জন্য।
৫) সন্ধান কৌশল :–
সংবাদ বিভাগে প্রশ্নটিকে কি ভাবে উপস্থাপিত করা হবে এটি স্থির করার আগে দুটি প্রযুক্তিগত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হয় : প্রথমত, বিভাগীয় কর্মীকে কিভাবে জিজ্ঞাসা করা হবে? দ্বিতীয়, কোন অংশে কোন ক্রম অনুসরণ করে সন্ধান করতে হবে? প্রথমে প্রশ্নটিই করার আগে প্রশ্নোক্ত বিষয়টি বিশ্লেষণ করে সঠিকভাবে নির্দিষ্ট বিষয়টিকে চিহ্নিত করতে হয়। তারপর লাইব্রেরীর নির্দিষ্ট রেফারেন্স সামগ্রীর সঙ্গে প্রশ্নটিকে বিন্যস্ত করা। প্রশ্নকর্তার সচেতনতা ও সর্তকতা এক্ষেত্রে লাইব্রেরিয়ানের পক্ষে খুব সহায়ক হয়ে উঠতে পারে। দ্বিতীয় সিদ্ধান্ত হল রেফারেন্স সামগ্রীর বিচিত্র প্রকৃতি ও তার ব্যবহার সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান কে কেন্দ্র করে। লাইব্রেরিয়ানের অভিজ্ঞতা ও ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের প্রয়োগ নৈপুণ্যে সন্ধানী তৎপরতার সহজেই পৌঁছে যেতে পারে সাফল্যের উপকূলে।
৬) সন্ধান পদ্ধতি :-
তথ্যভাণ্ডারের অনুসন্ধান পরিচালনার অধিকার লাইব্রেরিয়ানের। অবশ্য সন্ধানী পাঠক কে তিনি সঙ্গে নিতে পারেন। তাহলে কিছু খুঁজে পেলে সঙ্গে সঙ্গেই পাঠকের প্রয়োজন মিটেছে কি না বোঝা যায়। তবে সন্ধান কৌশলকে সবসময়ই অত্যন্ত নমনীয় রাখতে হয় যে কোনো মুহূর্তেই তাহলে দিক পরিবর্তন করা সম্ভব। আবার সন্ধানী নায়ক যেখানে পরিপক্ক হন সেখানে তার মনের মধ্যে সবসময় জাগ্রত থাকে বিকল্প কৌশল। এখানেও সন্ধানী পাঠকের উপস্থিতি বিকল্প পথ অবলম্বন এর পক্ষে হয়ে ওঠে সহায়ক সেই হেতু কাম্য।
৭) উত্তর :–
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সতর্ক অনুসন্ধানকারীরা উত্তর খুঁজে পান। সেখানেই কিন্তু প্রতিক্রিয়ার পরিসমাপ্তি ঘটে না ।লাইব্রেরিয়ানের কাছে তখন তাকে সদ্য অনুসন্ধানে লব্ধ তথ্যাদি। হয়তো কিছু সংস্কার ও সংশোধনের প্রয়োজন হয় অনেক সময় অনুসন্ধান ফলপ্রসূ তো হয়না। এটাও এক ধরনের উত্তর। তবে পাঠক কে খোলাখুলি বলে দেওয়াই ভালো। যদিও কোন পাঠকের পক্ষে এতে খুশি হওয়া সম্ভব নয়।
৮) সাড়া :-
উত্তর হল প্রাথমিক সারা। লাইব্রেরিয়ান যখন সন্ধান লব্ধ উত্তরের যথার্থতা সম্পর্কে স্বয়ং মুক্ত হন তখন কোন গৌরচন্দ্রিকা না করেই পাঠক কে তা জানতে পারেন। প্রায়শই উত্তরের মধ্যে পূর্ণতা সঞ্চয় এর জন্য কিছু টিকা-টিপ্পনি প্রয়োজন হয়। লব্ধ তত্ত্ব সম্পর্কে যখন জিজ্ঞাস্য লাইব্রেরীয়ান উভয়ের সন্তোষের মঞ্চে এসে দাঁড়াতে পারেন তখনই রেফারেন্স নাটক যবনিকা পতন।
এই পরম্পরা এই রেফারেন্স প্রক্রিয়ায় প্রায় সর্বত্র রক্ষিত। লাইব্রেরিয়ানের দিক থেকে এটা কোন একক প্রচেষ্টা নয়। জিজ্ঞাসু পাঠকের সঙ্গে সংলাপ সূত্রে গোটা ব্যাপারটা লাভ করে পূর্ণতা পায়। লাইব্রেরিয়ান কে সর্বক্ষণই গ্রহণ করতে হয় সহায়ক এর ভূমিকা। রেফারেন্স সার্ভিস প্রক্রিয়া সন্ধানী কার্যক্রম প্রাধান্য সমধিক। এই প্রক্রিয়ায় একটি স্থির বদ্ধ পদ্ধতির লাইব্রেরীয়ান কে পথের নির্দেশ দেবে এরকম ভাবনা কে প্রশ্রয় না দেয়ায় বিজ্ঞজনোচিত।