বঙ্গদেশে গ্রন্থাগার আন্দোলনের সূচনা পর্বে যে সমস্ত ব্যক্তিরা যুক্ত ছিলেন, তারা হলেন –
1) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর2) কুমার মুনীন্দ্রদেব রায়3) প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়4)সুশীল কুমার ঘোষ5) তিনকড়ি দত্ত
নিচে গ্রন্থাগার আন্দোলনের তাদের অবদান সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলো,
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১ - ১৯৪১) -
১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে 20 শে ডিসেম্বর নিখিল বঙ্গ গ্রন্থাগার পরিষদ সৃষ্টি হয়, এবং সেই পরিষদের প্রথম সভাপতির পদ অলংকৃত করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কবিগুরু তাঁর রচিত " লাইব্রেরি " ও " লাইব্রেরীর মুখ্য কর্তব্য " নামক দুটি বিখ্যাত প্রবন্ধ গ্রন্থাগার এর কাজ ও কর্তব্য সম্বন্ধে বর্ণনা করেন। সাধারণ গ্রন্থাগার উন্নয়নে তার মূল্যবান উপদেশ ও মতামত গ্রন্থাগার আন্দোলনকে সমৃদ্ধ করতে সাহায্য করেছেন।
কুমার মুনীন্দ্রদেব রায় ( ১৮৭৪ - ১৯৪৫ )
বঙ্গদেশে তথা ভারতবর্ষের গ্রন্থাগার আন্দোলনের পথপ্রদর্শক হলেন কুমার মুনীন্দ্রদেব রায় । তার নেতৃত্বে ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গীয় গ্রন্থাগার পরিষদ গঠিত হয় এবং মৃত্যুকাল পর্যন্ত তিনি বঙ্গীয় গ্রন্থাগার পরিষদের সভাপতির পদ অলংকৃত করেন। তাঁর রচিত ও প্রকাশিত গ্রন্থ গুলির মধ্যে," বেঙ্গল লাইব্রারি অ্যাসোসিয়েশন বুলেটিন", :ডাইরেক্টরি অফ লাইব্রারিজ ইন বেঙ্গল", গ্রন্থাগার, দেশ-বিদেশের গ্রন্থাগার প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায় ( ১৮৯২-১৯৮৫)
প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায় ছিলেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারিক, রবীন্দ্র জীবনীকার, গ্রন্থাগার ও গবেষক। বঙ্গীয় গ্রন্থাগার পরিষদের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল এবং তিনি বাংলার গ্রন্থাগার আন্দোলনের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন। গ্রন্থাগার বিজ্ঞান বিষয়ে তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ গুলি হল :-
1) বাংলা দশমিক বর্গীকরণ
2) বাংলা গ্রন্থ বর্গীকরণ
3) হিন্দি দশমিক বশীকরণ ইত্যাদি
তিনি রবীন্দ্র পুরস্কার (১৯৫৭), সাহিত্য একাডেমী পুরস্কার (১৯৬১), দেশিকোত্তম উপাধি (১৯৬৫), এবং পদ্মভূষণ উপাধি (১৯৮১), ইত্যাদি বিভিন্ন পুরস্কারে পুরস্কৃত ও সম্মানিত হয়েছিলেন।
সুশীল কুমার ঘোষ ( ১৮৯৪-১৯৬৪)
সুশীল কুমার ঘোষ বাংলার গ্রন্থাগার আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা এবং বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ এর প্রথম কর্মসচিব ছিলেন। গ্রন্থাগার আন্দোলন সম্পর্কে তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থটি হল :- " লাইব্রেরী আন্দোলন ও শিক্ষা বিস্তার "।
তিনকড়ি দত্ত ( ১৮৯৮-১৯৬৩)
তিনকড়ি দত্ত নিজে পেশায় ইঞ্জিনিয়ার হলেও আজীবন গ্রন্থগার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বঙ্গীয় গ্রন্থাগার পরিষদের বিভিন্ন গ্রন্থ তিনি অলংকৃত করেছিলেন।
এছাড়া খান বাহাদুর আহসানুল্লাহ, নীহাররঞ্জন রায়, প্রমিল চন্দ্র বসু, অজিত কুমার মুখোপাধ্যায়, সুবোধ কুমার মুখোপাধ্যায়, বেল্লারী সামান্তা কেশবন, খুব একটি বিভিন্ন সময়ে বাংলার গ্রন্থাগার আন্দোলনের যথেষ্ট নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। প্রবীর রায় চৌধুরী যথাযথ নেতৃত্বে পশ্চিমবাংলার গ্রন্থাগার আন্দোলনের এক নবজাগরণের সূচনা হয়েছিল।